Skip to main content

উপমন্যুর গুরুভক্তি

উপমন্যু ছিল মহর্ষি ব্যাঘ্রপাদের পুত্র। তিনি কঠোর তপস্যায় মহাদেবকে তুষ্ট করে অজর, অমর সর্বজ্ঞ সুদর্শন হওয়ার বর লাভ করেন। কৃষ্ণ এর কাছে দীক্ষা নিয়ে মহাদেবের তপস্যা করে অভীষ্ট বর লাভ করেন।

আয়োধধৌম্য নামক ঋষির শিষ্য। গুরুভক্তির জন্য খ্যাতি লাভ করেছিলেন। প্রথমদিকে তিনি গুরুর নির্দেশে গরু চরাতেন। গুরুগৃহ থেকে খাদ্য না পাওয়ার কারণে তিনি ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন নির্বাহ করতেন। দিন দিন উপমন্যু হৃষ্টপুষ্ট হচ্ছে দেখে- একদিন গুরু তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, সে খাদ্য পাচ্ছে কোথা থেকে। উত্তরে তিনি তাঁর ভিক্ষাবৃত্তির কথা জানান। উত্তরে গুরু তাঁকে বললেন যে, গুরুকে নিবেদন না করে ভিক্ষাণ্ণ ভোজন অনুচিত। এরপর উপমন্যু ভিক্ষার সকল সামগ্রী গুরুকে দান করতেন। কিন্তু গুরু ভিক্ষালব্ধ সকল দ্রব্য আত্মসাৎ করতেন এবং উপমন্যুকে কিছুই দিতেন না। এরপরেও উপমন্যুকে হৃষ্টপুষ্ট দেখে- গুরু পুনরায় তাঁর খাদ্যগ্রহণের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে- উপমন্যু উত্তরে জানালেন যে, প্রথম ভিক্ষার সমস্ত দ্রব্য গুরুকে প্রদানের পর, তিনি দ্বিতীয়বার ভিক্ষা করেন এবং সেই ভিক্ষা দ্বারা তাঁর জীবিকা নির্বাহ হয়। এবার গুরু তাঁকে দ্বিতীয়বার ভিক্ষা করতে নিষেধ করে বললেন- এতে লোভ বৃদ্ধি পায় এবং অন্য ভিক্ষুকদের ক্ষতি হয়। এরপর উপমন্যু একবারই ভিক্ষা করতেন এবং তিনি তা গুরুকেই দান করতেন।

এরপরও উপমন্যু হৃষ্টপুষ্ট থাকছেন দেখে- গুরু পুনরায় এর কারণ জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলেন যে, উপমন্যু আশ্রমের গরুর দুধ খেয়ে থাকেন। গুরু এবার বললেন যে, বিনা অনুমতিতে আশ্রমের গরুর দুধ খাওয়া অন্যায়। এরপর গুরু আশ্রমের গরুর দুধ খাওয়ার অনুমতিও দিলেন না। এরপরও উপমন্যু হৃষ্টপুষ্ট থাকছেন দেখে- গুরু পুনরায় এর কারণ জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলেন যে, উপমন্যু আশ্রমের গরুর দুধ তাদের বাছুর খাওয়ার পর এদের মুখে যে ফেনা থাকে তা খেয়েই ইনি ক্ষুধা মেটান। গুরু এবার বললেন যে, উপমন্যুর জন্য বাছুরেরা দয়াবশত প্রচুর ফেনা উৎপন্ন করে। এতে বাছুরদের পুষ্টিতে ব্যঘাত হয়। এরপর তিনি কিছুদিন অভুক্তই রইলেন। পরে ক্ষুধা সহ্য করতে না পেরে- তিনি আকন্দ পাতা চিবিয়ে খান। ফলে, আকন্দের বিষে তিনি অন্ধ হয়ে একটি কূপে পড়ে যান। এদিকে উপমন্যুর ঘরে ফিরতে বিলম্ব হচ্ছে দেখে- গুরু তাঁকে খুঁজতে খুঁজতে কূপের মধ্যে দেখতে পেলেন। তাঁর কাছ থেকে কূপে পড়ার প্রকৃত কারণ জানতে পেরে গুরু তাঁকে দেব-চিকিৎসক 
অশ্বিনীকুমাদ্বয়-কে আহ্বান করতে বলে চলে গেলেন। এরপর উপমন্যু এই দেব-চিকিৎসকদ্বয়কে আহ্বান করলে, তাঁরা এসে উপমন্যুকে খাওয়ার জন্য একটি পিঠা দিলেন। কিন্তু উপমন্যু এই পিঠা গুরুকে নিবেদন না করে গ্রহণ করবেন না- এরূপ প্রতিজ্ঞা করলে- অশ্বিনীকুমাদ্বয় তাঁর এরূপ গুরুভক্তি দেখে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে বর দিয়ে বললেন- তোমার গুরুর দাঁত কালো ও লোহার মতো হবে, পক্ষান্তরে তোমার দাঁত সোনার হবে এবং তোমার অন্ধত্ব দূর হবে। উপমন্যু দৃষ্টিলাভ করে গুরুর কাছে এসে সব বললেন। এরপর গুরু তাঁকে সকল বেদ ও ধর্মশাস্ত্র দান করে আশীর্বাদ পূর্বক ঘরে ফিরে যাবার অনুমতি দিলেন।
        [সূত্র: মহাভারত। আদিপর্ব্ব। উপমন্যু উপখ্যান]

Comments

Popular posts from this blog

আরুণির গুরুভক্তি

প্রাচীন ভারতে শিক্ষার্থীদের গুরুগৃহে গিয়ে থেকে শিক্ষা গ্রহনের একটা রীতি ছিল। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো এবং নৈতিক মূল্যবোধের পাঠ পড়ানোর জন্য বৈদিক ঋষিরা আশ্রম প্রথার প্রচলন করেছিলেন। আশ্রমপ্রথা দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। একটি বর্ণাশ্রম, অন্যটি চতুরাশ্রম। কর্মের ভিত্তিতে সমাজে ব্রাহ্মন, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শুদ্র এই চার শ্রেনীর লোক বাস করত। মানুষের জীবনকালকে ভাগ করা হত ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ, বানপ্রস্থ ও সন্নাস এই চারটি শ্রেনীতে। ব্রহ্মচর্য পালনের সময় শিক্ষার্থীরা গুরুগৃহে যেত। পুঁথিগত বিদ্যা ও নৈতিক মূল্যবোধের পাঠ শেষ করে  নিজেদের বাড়িতে ফিরে এসে গার্হস্থ জীবনে প্রবেশ করত। শিক্ষার্থীরা গুরুগৃহকে নিজের বাড়ির মতোই মনে করত। গুরুও শিক্ষার্থীদের নিজের সন্তানের ন্যায় স্নেহ ভালবাসা দিতেন। আজকের গল্পটা মহান ঋষি বেদব্যাস রচিত মহাভারত গ্রন্থ থেকে গৃহীত। আজকের গল্প আরুনির উপাখ্যান বা আরুনির উদ্দালক হয়ে ওঠার কাহিনী।  পুরাকালে ভারতে অয়োদ ধৌম্য নামে এক ঋষি ছিলেন। তাঁর আশ্রমে ব্রহ্মচর্য পালনের জন্য শিক্ষার্থীরা আসত। আরুণি, উপমণ্যু এবং বেদ নামে তাঁর তিন শিষ্য ছিল। তখন বর্ষাকাল। জলের তোড়...

দশানন রাবণকৃত শ্রী শিবতান্ডব স্তোত্রম

দশানন রাবণকৃত শ্রী শিবতান্ডব স্তোত্রম বাংলা অনুবাদ সহ (১) জটাটবীগলজ্জল প্রবাহ পাবিতস্থলে গলেহবলম্ব‍্য লম্বিতাং ভূজঙ্গতুঙ্গমালিকাম । ডমড্ডমড্ডমড্ডমন্নিনাদবড্ডমর্বয়ং চকার চন্ডতান্ডবং তনোতু নঃ শিবঃ শিবম।।।।। । (২) জটাকটাহ সম্ভ্রম ভ্রমন্নিলিম্পনির্ঝরী বিলোল বীচিবল্লরী বীরাজমানমূদ্ধনি।। ধগদ্ধগদ্ধগজ্জলল্ললাট পট্রপাবকে কিশোরচন্দ্রশেখরেরতিঃ প্রতিক্ষণং মম।। (৩) ধরাধরেন্দ্রনন্দিনীবিলাসবন্ধুবন্ধুর স্ফুরদ্দিগন্ত সন্ততি প্রমোদ মানমানসে কৃপাকটাক্ষ ধোরণীনিরুদ্ধদুর্ধরাপদি ক্বচিদ্দিগম্বরেমনো বিনোদমেতুবস্তুনি।।।। (৪) জটাভুজঙ্গ পিঙ্গল স্ফুরৎফণামণিপপ্রভা কদম্বকঙ্কুমদ্রবপ্রলিপ্তদিগ্বধূমুখে।। মদান্ধসিন্ধুরস্ফুরত্ত্বগুত্তরীয়মেদুরে মনো বিনোদ মদ্ভূতং বিভর্তু ভূতভর্তরি।। (৫) সহস্রলোচনপ্রভৃত‍্যশেষলেখশেখর প্রসূনধূলিধোরণীবিধূসরাঙঘ্রিপীঠভূঃ। ভুজঙ্গরাজমালয়া নিবদ্ধজাটজূটকঃ শ্রিয়ৈ চিবায় জায়তাং চকোর বন্ধুশেখর।।।। (৬) ললাটচত্বরজ্বলদ্ধনঞ্জয়স্ফুলিঙ্গভা নিপীতপঞ্চসায়কং নমন্নিলিম্পনায়কম। সুদাময়ূখলেখয়াবিরাজমানশেখরং মহাকপালি সম্পদে শিরো জটালমস্তু নঃ।।।।। (৭) করালভাল পট্টিকাধগদ্ধগদ্ধগজ্জল দ্ধনঞ্জয়াহুতীকৃতপ্রচন্ড পঞ্...

বিষ্ণুর দশাবতার

বিষ্ণুর দশ অবতার এর নাম হল --- মৎস্য কূর্ম বরাহ নৃসিংহ বামন পরশুরাম রাম কৃষ্ণ বুদ্ধ কল্কি 1. মৎস্য অবতার মৎস্য ভগবান বিষ্ণুর প্রথম অবতার রূপ। এই অবতার রূপে সত্যযুগে বিষ্ণুর আবির্ভাব। পুরাণ অনুযায়ী পৃথিবীর প্রথম মানুষ মনুকে এক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে মৎস্য রূপে বিষ্ণু আবির্ভূত হন। শরীরের উপরের অংশ পুরুষ মানুষের মত কিন্তু নীচের অংশ মাছের মত। 2. কূর্ম অবতার কূর্ম ভগবান বিষ্ণুর দ্বিতীয় অবতার। সত্যযুগে এই অবতার রূপে বিষ্ণু আবির্ভূত হন। পুরাণে বলা হয় সমুদ্রমন্থনের সময়, মন্থন কালে মন্দর পর্বত সমুদ্রের নীচে ডুকে যাচ্ছিল। তাই সেই সময় বিষ্ণু কূর্ম অবতার অর্থাৎ কচ্চপের রূপে আবির্ভূত হয়ে পর্বত তাঁর পৃষ্ঠে ধারণ করেন। যার ফলে অমৃত প্রাপ্তি সম্পূর্ণ হয়। 3. বরাহ অবতার বন্য শূকরের রূপ ধারণ করেছিলেন ভগবান বিষ্ণু। এটি তাঁর তৃতীয় অবতার। বরাহ অবতারে তিনি সত্য যুগে আবির্ভূত হন। পুরাণ মতে পৃথিবীকে হিরণ্যাক্ষ নামক মহাশক্তিশালী অসুরের হাত থেকে রক্ষা করতে এই অবতার রূপে বিষ্ণু আসেন। অসুর পৃথিবীকে মহাজাগতিক সমুদ্রের নীচে লুকিয়ে রেখেছিলেন। বরাহ রুপী বিষ্ণু হিরণ্যাক্ষের সাথে ক্রমাগত হাজার বছর যুদ্ধ করে তাকে প...