প্রাচীন ভারতে শিক্ষার্থীদের গুরুগৃহে গিয়ে থেকে শিক্ষা গ্রহনের একটা রীতি ছিল। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো এবং নৈতিক মূল্যবোধের পাঠ পড়ানোর জন্য বৈদিক ঋষিরা আশ্রম প্রথার প্রচলন করেছিলেন। আশ্রমপ্রথা দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। একটি বর্ণাশ্রম, অন্যটি চতুরাশ্রম। কর্মের ভিত্তিতে সমাজে ব্রাহ্মন, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শুদ্র এই চার শ্রেনীর লোক বাস করত। মানুষের জীবনকালকে ভাগ করা হত ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ, বানপ্রস্থ ও সন্নাস এই চারটি শ্রেনীতে। ব্রহ্মচর্য পালনের সময় শিক্ষার্থীরা গুরুগৃহে যেত। পুঁথিগত বিদ্যা ও নৈতিক মূল্যবোধের পাঠ শেষ করে নিজেদের বাড়িতে ফিরে এসে গার্হস্থ জীবনে প্রবেশ করত। শিক্ষার্থীরা গুরুগৃহকে নিজের বাড়ির মতোই মনে করত। গুরুও শিক্ষার্থীদের নিজের সন্তানের ন্যায় স্নেহ ভালবাসা দিতেন। আজকের গল্পটা মহান ঋষি বেদব্যাস রচিত মহাভারত গ্রন্থ থেকে গৃহীত। আজকের গল্প আরুনির উপাখ্যান বা আরুনির উদ্দালক হয়ে ওঠার কাহিনী।
পুরাকালে ভারতে অয়োদ ধৌম্য নামে এক ঋষি ছিলেন। তাঁর আশ্রমে ব্রহ্মচর্য পালনের জন্য শিক্ষার্থীরা আসত। আরুণি, উপমণ্যু এবং বেদ নামে তাঁর তিন শিষ্য ছিল। তখন বর্ষাকাল। জলের তোড়ে ঋষি ধৌমের জমির আল ভেঙে গিয়েছিল। তিনি তাঁর পাঞ্চালদেশীয় শিষ্য আরুণিকে ডেকে আল বেঁধে আসার নির্দেশ দিলেন। গুরুর আজ্ঞা পালনের জন্য আরুণি আল মেরামতের জন্য মাঠে পৌঁছাল। কিন্তু জলের তীব্র বেগের কারনে কিছুতেই আল বাঁধতে সক্ষম হচ্ছিল না। তখন সে নিজেই শুয়ে পড়ে জলের গতি রোধ করল। এদিকে দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা নামল। ঋষি ধৌম্যের অন্য শিষ্যরা সকলে গুরুগৃহ ফিরে এসেছে। কিন্তু আরুণির দেখা নেই। চিন্তিত ঋষি অপর দুই শিষ্য উপমন্যু ও বেদকে নিয়ে আল ভাঙা জমি অভিমুখে রওনা হলেন। "বৎস আরুণি কোথায় আছ, এস।" বলে হাঁক দিলেন। আরুণি গুরুর সম্মুখে এসে করজোরে নিবেদন করল, "আমি জলপ্রবাহ রোধ করতে না পেরে সেখানে শুয়ে ছিলাম। এখন আপনি ডাকাতে উঠে এলাম। আজ্ঞা করুন কি করতে হবে।" আরুণির কর্মনিষ্ঠায় প্রীত হয়ে ঋষি ধৌম্য বললেন, "তুমি কেদারখণ্ড বিদারণ করে উঠেছ সেইজন্য তোমার নাম উদ্দালক হবে। আমার আজ্ঞা পালন করেছ সেজন্য তুমি শ্রেয়োলাভ করবে এবং সমস্ত বেদ ও ধর্মশাস্ত্র তোমার অন্তরে প্রকাশিত থাকবে।" কেদারখণ্ড অর্থাৎ জমির আল ভেদ করে ওঠার জন্য আরুণির নাম হয় উদ্দালক। পরবর্তীকালে আরুণিও একজন বেদজ্ঞ ঋষি হয়ে ওঠেন এবং মহর্ষি উদ্দালক নামেই পরিচিতি পান আর তাঁর গুরুগৃহের কাহিনীটি আজও লোকমুখে ফেরে আরুণির উপাখ্যান নামে।
Comments
Post a Comment