Skip to main content

কলা বৌ কি এবং কেন এটা পূজা দেওয়া হয়?

Copy from Quora

'কলা বৌ' নিয়ে অনেক কথাই প্রচলিত আছে। অনেকের মুখেই শুনে থাকবেন কলা বৌ হলেন গণেশের স্ত্রী। এরকম অনেক হাসি রসাত্মক কথাই আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে। কিন্তু কলা বৌয়ের theory -টা এসেছে মা দুর্গার সর্বত্র বিরাজমান রূপ থেকে।

প্রাচীন বাংলায় দুর্গার পূজা এখনকার নিয়মে হতো না। বহুল প্রচলিত পূজা রীতি হলো মগধেশ্বরীর পূজা। প্রসঙ্গতঃ, বাংলা তৎকালে মগধ রাজ্যের অংশ ছিলো, যার বেশির ভাগই ছিলো বন। আর শাক্ত ও তন্ত্রমন্ত্রের এই দেশে জগৎ জননীকে এদেশের ঈশ্বরী হিসেবে দেবী মগধেশ্বরী বলা হতো। এই মগধেশ্বরীর পূজা মূলত বনেই হতো, বট গাছের নিচে। এখনো অনেক জায়গায় দেখবেন বটগাছে শাড়ি পরানো থাকে। তা মূলতঃ দুর্গারই পূজা। অনেক জায়গায় বনদুর্গা-ও বলে। সুন্দরবন অঞ্চলে এই বনদেবীর পূজার বেশ ভালোই প্রচলন আছে। সেখানকার মানুষ ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বনদুর্গার পূজা করে। তারা দেবীর এই রূপকে বনবিবি বলে চেনে।

যেহেতু কথা উঠলো, তাই বলে রাখি — সুন্দরবনের প্রচলিত লোককাহিনী অনুযায়ী সুন্দরবনের রাজা দক্ষিণরায় হলেন একজন রাক্ষস, যে বাঘ রূপে মানুষকে আক্রমণ করে। তাকে বশে আনতে পারবে একমাত্র বনবিবি। এই জন্য হিন্দু মুসলিম সবাই সুন্দরবনের অধিশ্বরী দেবী বনবিবির পূজা করে থাকে।

অতি গভীর বন থেকে এবার একটু বের হয়ে একটু জনমানবপূর্ণ জায়গায় আসা যাক। যেখানে রক্ষাকারী দেবী দুর্গা পরিণত হয়েছেন মা দুর্গায়। এখন তিনি খাদ্য শষ্যতেও বিরাজমান হয়েছেন। মানুষ তাদের বসবাস ও নানা জিনিস প্রাপ্তির আশায় ও ধন্যবাদার্থে দেবীকে প্রকৃতির আরও অনেক জায়গায় পূজা করতে শুরু করল। মানুষের সভ্যতার এক অনন্য নিদর্শন এই নবপত্রিকা। দেবী প্রকৃতিকে এবার পূজা করা শুরু হলো নয়টি পত্রিকায়। আর সেই নয়টি এমন —

  1. কদলী বা রম্ভা: কদলি গাছ এর অধিষ্টাত্রী দেবী ব্রহ্মাণী;
  2. কচু: কচু গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী কালিকা;
  3. হরিদ্রা: হরিদ্রা/হলুদ গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী উমা;
  4. জয়ন্তী: জয়ন্তী গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী কার্তিকী;
  5. বিল্ব: বিল্ব/বেল গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী শিবা;
  6. দাড়িম্ব: দাড়িম্ব/দাড়িম গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী রক্তদন্তিকা;
  7. অশোক: অশোক গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী শোকরহিতা;
  8. মান: মানকচু গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী চামুণ্ডা;
  9. ধান: ধান গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী লক্ষ্মী

এই নয় দেবী একত্রে "নবপত্রিকাবাসিনী নবদুর্গা" নামে "ॐ নবপত্রিকাবাসিন্যৈ নবদুর্গায়ৈ নমঃ" মন্ত্রে পূজিতা হন।

আর ধীরে ধীরে সেই ছোট করে করা দুর্গাপূজাই একদিন রাজবাড়ীর আঙ্গিনায় চলে আসল। কিন্তু দেবী প্রকৃতি তার সরূপ একই ভাবে ধরে রাখলেন। আর এখন তো তিনি সর্বত্র পূজিতা দেবী। কোন গ্রন্থে বিশেষ উল্লেখ না থাকলেও নবপত্রিকা বাঙ্গালীর এক প্রাচীণ ঐতিহ্য।

দুর্গাপূজার মহাসপ্তমীর সকালে জলে ডুব দিয়ে এখনও মানুষ প্রথা অনুযায়ী মা দুর্গাকে পূজা মণ্ডপে নিয়ে আসেন।

|| ॐ শ্রী শ্রীদুর্গা শরণম্ ||

ধন্যবাদ

Comments

Popular posts from this blog

আরুণির গুরুভক্তি

প্রাচীন ভারতে শিক্ষার্থীদের গুরুগৃহে গিয়ে থেকে শিক্ষা গ্রহনের একটা রীতি ছিল। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো এবং নৈতিক মূল্যবোধের পাঠ পড়ানোর জন্য বৈদিক ঋষিরা আশ্রম প্রথার প্রচলন করেছিলেন। আশ্রমপ্রথা দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। একটি বর্ণাশ্রম, অন্যটি চতুরাশ্রম। কর্মের ভিত্তিতে সমাজে ব্রাহ্মন, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শুদ্র এই চার শ্রেনীর লোক বাস করত। মানুষের জীবনকালকে ভাগ করা হত ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ, বানপ্রস্থ ও সন্নাস এই চারটি শ্রেনীতে। ব্রহ্মচর্য পালনের সময় শিক্ষার্থীরা গুরুগৃহে যেত। পুঁথিগত বিদ্যা ও নৈতিক মূল্যবোধের পাঠ শেষ করে  নিজেদের বাড়িতে ফিরে এসে গার্হস্থ জীবনে প্রবেশ করত। শিক্ষার্থীরা গুরুগৃহকে নিজের বাড়ির মতোই মনে করত। গুরুও শিক্ষার্থীদের নিজের সন্তানের ন্যায় স্নেহ ভালবাসা দিতেন। আজকের গল্পটা মহান ঋষি বেদব্যাস রচিত মহাভারত গ্রন্থ থেকে গৃহীত। আজকের গল্প আরুনির উপাখ্যান বা আরুনির উদ্দালক হয়ে ওঠার কাহিনী।  পুরাকালে ভারতে অয়োদ ধৌম্য নামে এক ঋষি ছিলেন। তাঁর আশ্রমে ব্রহ্মচর্য পালনের জন্য শিক্ষার্থীরা আসত। আরুণি, উপমণ্যু এবং বেদ নামে তাঁর তিন শিষ্য ছিল। তখন বর্ষাকাল। জলের তোড়...

দশানন রাবণকৃত শ্রী শিবতান্ডব স্তোত্রম

দশানন রাবণকৃত শ্রী শিবতান্ডব স্তোত্রম বাংলা অনুবাদ সহ (১) জটাটবীগলজ্জল প্রবাহ পাবিতস্থলে গলেহবলম্ব‍্য লম্বিতাং ভূজঙ্গতুঙ্গমালিকাম । ডমড্ডমড্ডমড্ডমন্নিনাদবড্ডমর্বয়ং চকার চন্ডতান্ডবং তনোতু নঃ শিবঃ শিবম।।।।। । (২) জটাকটাহ সম্ভ্রম ভ্রমন্নিলিম্পনির্ঝরী বিলোল বীচিবল্লরী বীরাজমানমূদ্ধনি।। ধগদ্ধগদ্ধগজ্জলল্ললাট পট্রপাবকে কিশোরচন্দ্রশেখরেরতিঃ প্রতিক্ষণং মম।। (৩) ধরাধরেন্দ্রনন্দিনীবিলাসবন্ধুবন্ধুর স্ফুরদ্দিগন্ত সন্ততি প্রমোদ মানমানসে কৃপাকটাক্ষ ধোরণীনিরুদ্ধদুর্ধরাপদি ক্বচিদ্দিগম্বরেমনো বিনোদমেতুবস্তুনি।।।। (৪) জটাভুজঙ্গ পিঙ্গল স্ফুরৎফণামণিপপ্রভা কদম্বকঙ্কুমদ্রবপ্রলিপ্তদিগ্বধূমুখে।। মদান্ধসিন্ধুরস্ফুরত্ত্বগুত্তরীয়মেদুরে মনো বিনোদ মদ্ভূতং বিভর্তু ভূতভর্তরি।। (৫) সহস্রলোচনপ্রভৃত‍্যশেষলেখশেখর প্রসূনধূলিধোরণীবিধূসরাঙঘ্রিপীঠভূঃ। ভুজঙ্গরাজমালয়া নিবদ্ধজাটজূটকঃ শ্রিয়ৈ চিবায় জায়তাং চকোর বন্ধুশেখর।।।। (৬) ললাটচত্বরজ্বলদ্ধনঞ্জয়স্ফুলিঙ্গভা নিপীতপঞ্চসায়কং নমন্নিলিম্পনায়কম। সুদাময়ূখলেখয়াবিরাজমানশেখরং মহাকপালি সম্পদে শিরো জটালমস্তু নঃ।।।।। (৭) করালভাল পট্টিকাধগদ্ধগদ্ধগজ্জল দ্ধনঞ্জয়াহুতীকৃতপ্রচন্ড পঞ্...

বিষ্ণুর দশাবতার

বিষ্ণুর দশ অবতার এর নাম হল --- মৎস্য কূর্ম বরাহ নৃসিংহ বামন পরশুরাম রাম কৃষ্ণ বুদ্ধ কল্কি 1. মৎস্য অবতার মৎস্য ভগবান বিষ্ণুর প্রথম অবতার রূপ। এই অবতার রূপে সত্যযুগে বিষ্ণুর আবির্ভাব। পুরাণ অনুযায়ী পৃথিবীর প্রথম মানুষ মনুকে এক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে মৎস্য রূপে বিষ্ণু আবির্ভূত হন। শরীরের উপরের অংশ পুরুষ মানুষের মত কিন্তু নীচের অংশ মাছের মত। 2. কূর্ম অবতার কূর্ম ভগবান বিষ্ণুর দ্বিতীয় অবতার। সত্যযুগে এই অবতার রূপে বিষ্ণু আবির্ভূত হন। পুরাণে বলা হয় সমুদ্রমন্থনের সময়, মন্থন কালে মন্দর পর্বত সমুদ্রের নীচে ডুকে যাচ্ছিল। তাই সেই সময় বিষ্ণু কূর্ম অবতার অর্থাৎ কচ্চপের রূপে আবির্ভূত হয়ে পর্বত তাঁর পৃষ্ঠে ধারণ করেন। যার ফলে অমৃত প্রাপ্তি সম্পূর্ণ হয়। 3. বরাহ অবতার বন্য শূকরের রূপ ধারণ করেছিলেন ভগবান বিষ্ণু। এটি তাঁর তৃতীয় অবতার। বরাহ অবতারে তিনি সত্য যুগে আবির্ভূত হন। পুরাণ মতে পৃথিবীকে হিরণ্যাক্ষ নামক মহাশক্তিশালী অসুরের হাত থেকে রক্ষা করতে এই অবতার রূপে বিষ্ণু আসেন। অসুর পৃথিবীকে মহাজাগতিক সমুদ্রের নীচে লুকিয়ে রেখেছিলেন। বরাহ রুপী বিষ্ণু হিরণ্যাক্ষের সাথে ক্রমাগত হাজার বছর যুদ্ধ করে তাকে প...